রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে গভীর রাতে সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৩টার দিকে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ মোড়ের (তিন রাস্তা মোড়) কাছে ‘স্বপ্ননীড় হাউজিং’-এর ৭২০/১ নম্বর বাড়িতে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। অভিযোগ অনুযায়ী, ডাকাত দলটি ঐ বাসা থেকে নগদ ৭৫ লাখ টাকা এবং ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নেয়।
কীভাবে সংঘটিত হয় ডাকাতি?
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান জানিয়েছেন, ডাকাত দলের সদস্যরা সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে বাসায় ঢোকে। তাদের মাস্ক পরা ও সামরিক পোশাক দেখে দারোয়ান গেট খুলে দেন। ডাকাতরা বাড়ির মালিক আবু বকরের তিনতলা ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে। এই দলে সেনাবাহিনীর পোশাক পরা লোকজন ছাড়াও র্যাবের জ্যাকেট ও সাধারণ পোশাকধারী ব্যক্তিরা ছিল।
অস্ত্রের খোঁজে তল্লাশি
বাড়ির মালিক আবু বকর বলেন, ডাকাতরা বাসায় ঢুকে তার বৈধ অস্ত্র থানায় জমা না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তল্লাশি চালায়। তাদের অস্ত্রটি থানায় জমা দেওয়া হয়েছে জানালেও ডাকাতরা কোনো কথা না শুনে আলমারিগুলো খুলে তছনছ করে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। এমনকি, তার অফিসেও প্রবেশ করে সেখানেও টাকা খুঁজতে তল্লাশি চালায়।
ব্যবহৃত যানবাহন ও ডাকাত দলের গঠন
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ডাকাতরা দুটি মাইক্রোবাস ও দুটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করে ঘটনাস্থলে আসে। প্রায় ১৫ থেকে ২০ জনের একটি দল এই ডাকাতিতে অংশ নেয়, যাদের মধ্যে অর্ধেক সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মের মতো দেখতে পোশাক পরা ছিল। বাকিরা র্যাবের কটি এবং সাধারণ পোশাকে ছিল।
সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে অপরাধীরা
ডাকাতির পর, পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরা লোকজন প্রবেশ করে, যাদের সাথে র্যাবের কটি পরা এবং সাধারণ পোশাকধারী ব্যক্তিরাও ছিল। ডাকাত দলটি প্রায় ঘণ্টাখানেক বাসায় অবস্থান করে ভোর সোয়া ৪টার দিকে স্থান ত্যাগ করে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ
ডাকাতির ঘটনার পর, মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের ব্যবহৃত যানবাহন শনাক্তের চেষ্টা চলছে। সেনাবাহিনী ও র্যাবও ঘটনার তদন্তে সম্পৃক্ত রয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষণ
ওসি আলী ইফতেখার বলেন, ডাকাতরা এমনভাবে সেনাবাহিনীর পোশাক পরেছিল যে, তাদের ভুয়া বলে সন্দেহ করার উপায় ছিল না। হেলমেট পরা দেখে সেনাসদস্যের মতো মনে হয়েছিল। এমনকি, ডাকাতদের কাছে বড় একটি রাইফেলের মতো দেখতে অস্ত্র ছিল, যা থানার কোনও অস্ত্র হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
বর্তমানে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।