বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের অর্ডার সরছে প্রতিবেশী দেশে

প্রকাশ:

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, যা দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত হিসেবে পরিচিত, বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সরকার পতন এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গভীর সংকটে পড়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে, দেশের পোশাক কারখানাগুলোর বেশ কিছু ক্রয়াদেশ ভারতের মতো প্রতিবেশী দেশসহ পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, এবং কেম্বোডিয়ার দিকে সরতে শুরু করেছে। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে এই প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।

সময়মতো শিপমেন্টে ব্যর্থতা: ক্রেতাদের অন্যত্র সরে যাওয়া

বিদেশি ব্র্যান্ডের ক্রেতাদের অনেক অর্ডার সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পারায় ভারতের মতো বিকল্প বাজারে চলে গেছে। একটি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান “নো এক্সিট” এর পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ জাকির জানিয়েছেন, “আমাদের কিছু ক্রেতা ইন্ডিয়াতে তাদের অর্ডার প্লেস করেছে, কারণ বাংলাদেশের কারখানাগুলো সময়মতো শিপমেন্ট এবং ডেলিভারি দিতে পারছে না। তবে আমরা যদি পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে পারি, তাহলে ক্রেতারা আবারও ফিরতে পারেন।”

শ্রমিক অসন্তোষ: আন্দোলন এবং কারখানা বন্ধ

বাংলাদেশের গাজীপুর, সাভার, এবং আশুলিয়া অঞ্চলের পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া থাকা, ছাঁটাই এবং অন্যান্য বঞ্চনা থেকে সংঘর্ষ এবং কারখানা বন্ধের মতো ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রচেষ্টা চালালেও পুরোপুরি স্থিতিশীলতা এখনো ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।

বিজিএমইএ-এর প্রতিক্রিয়া: সংকট মোকাবিলার প্রচেষ্টা

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এই সংকটকে মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব। তিনি উল্লেখ করেন যে শ্রমিক অসন্তোষ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রয়াদেশ হ্রাস পাচ্ছে এবং এতে দেশের অর্থনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। “ক্রয়াদেশ বিলম্বিত হওয়ার কারণে কিছু অর্ডার এয়ার শিপমেন্টে পাঠাতে হচ্ছে এবং ডিসকাউন্ট দিতে হচ্ছে, যা সরাসরি অর্থনৈতিক ক্ষতি সৃষ্টি করছে,” বলেন রাকিব।

বিদেশি প্রভাব এবং ঝুট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব

পোশাক খাতের বর্তমান সংকটে আন্তর্জাতিক চাপ এবং বহিরাগত ইন্ধনের ভূমিকা থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। ঝুট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে বিরোধও অস্থিরতার পেছনে কারণ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম আক্তার বলেন, “ঝুট ব্যবসা নিয়ে কিছু বহিরাগত সমস্যা রয়েছে, যারা চায় এই শিল্প অন্য দেশে চলে যাক।”

১৮ দফা চুক্তি: সমস্যা সমাধানের চেষ্টা

শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে ১৮ দফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তবে সব কারখানায় এই চুক্তির বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার বলেন, “এই চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সমস্ত ফ্যাক্টরিতে এর কার্যকরতা নিশ্চিত করতে হবে।”

সরকারের উদ্যোগ: শ্রমিকদের শান্ত রাখা এবং সমন্বয়ের প্রচেষ্টা

সরকার এখন কারখানাভিত্তিক সমস্যাগুলো নিরসনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। যৌথবাহিনী, শিল্প পুলিশ, র‍্যাব, এবং বিজিবির সমন্বিত তৎপরতায় আশুলিয়া এবং সাভার অঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। শ্রমিকদের বেতন বকেয়া সমস্যার সমাধানে সরকার প্রয়োজনে ঋণ দিয়ে বেতন ভাতা পরিশোধের ব্যবস্থাও গ্রহণ করছে।

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব: অর্থনৈতিক ক্ষতি ও প্রতিযোগিতামূলক চাপ

দেশের পোশাক শিল্পের অস্থিরতা নিরসন না হলে এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বে। ক্রেতারা দেশের বাইরে থেকে বিকল্প সরবরাহকারীদের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে, যা বাংলাদেশের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। তাই সংকট নিরসনের জন্য অবিলম্বে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পুনরুদ্ধার সম্ভব হলেও তা নির্ভর করছে বর্তমান পরিস্থিতি কত দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সমাধান করা যায় তার ওপর।

***পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।***

শেয়ার করুন:

Subscribe

সর্বশেষ

এমন আরও
সম্পর্কিত

2021 ZHEJIANG EXPORT ONLINE FAIR Opening!

Hosted by the Zhejiang Department of Commerce and undertaken...

Zhejiang Online Export Trade Fair

ZHEJIANG PROVINCE, CHINA EXPORT ONLINE FAIR –Zhejiang Online Export...

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা কাজেমীর মৃত্যু

বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা (চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট) আল্লাহ মালিক কাজেমী করোনা...